কুয়াশা

শীতের রাত , আজম আর মালিকা দুই জন প্রেমিক প্রেমিকা এক সাথে পালিয়েছে বাড়ী ছেড়ে। কুয়াশা রাত। রাতের অন্ধকারে দৌড় দিয়ে যাচ্ছিল তারা হঠাত তারা একটা সাদা জিন দেখে যেটা মাঝ রাতে এক তাল গাছ থেকে আরেক তাল গাছে নিজের পা ছড়িয়ে ঘুম দিচ্ছিল মালিকার হাতে তাবিজ ছিল এর জন্য সে ভয় পাই নাই কিন্ত দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আজম আক্রান্ত হয়ে যায় এবং সকাল বেলা তাকে তাল গাছে পাওয়া যায়। গ্রামের এক দল কাঠুরে সকালে তাকে উদ্ধার করে সখিপুরা গ্রামে নিয়ে যায় এবং সেইখানে এই ঘটনা প্রকাশ পায় এবং আমি সেই যাত্রায় বেচে যাই কিন্ত এখন আজকে দুই বছর পর আমার বাসা তে এক লোক সাদা আলখাল্লা পড়া চলে আসছে। আমি সামিনা পেশায় শিক্ষিকা ,একটা হাই স্কুলে পড়াই। আমি আমার বাপের বাড়িতে থাকা কালিন এই ভয়ানক ঘটনার সম্মুখিন হয় তারা। এর পর এর ঘটনা আমরা আর কেউই জানিনাই ।আমরা গ্রাম থেকে ফেরার পরে শুনেছিলাম আজম পাগল হয়ে গেছে এবং তার চিকিৎসা চলছে আরেক দিকে মালিকা জানা নাই সে কই হারিয়েছে। আজকে আমার বাসায় এই অচেনা ব্যাক্তির আগমন আমাকে ভয় পাইয়ে দিলেও আমার বাড়ি ঘর বন্ধ আছে । যাদু করেও আমাকে কেউই ক্ষতি করতে পারবে না। তবু ভয় করছে ।একে সাথে নিয়ে আসছে আমার জামাই আবির । আবির এক ব্যাংকে জব করে এবং সেইখানেই এর সাথে আবিরের পরিচয় । আবির ভুত প্রেতে বিলিভ করে না সে জানে যে আমি অন্য ধরনের তাই সে আমার কান্ড কীর্তি পছন্দ করে না। সুরা বাকারা ঘরে এর ভেতরে ছেড়ে দিয়ে আমি আবিরের সামনে আসি চা নিয়ে, লোক যেটাকে সাথে করে এনেছে আজ হঠাত দেখি মানুষ টা অন্য রকম করছে, আবির ১ম এ পাত্তা দেয়নাই সে রুমের ভেত্র ছিল , আমি ভয়ে চিৎকার দেয়ার সাথে সাথে সে দৌড়ে আসে এবং দেখে সেই মানুষ্ টা আর নাই ধোয়া হয়ে গেছে এবং কুয়াশার রাতে আর দেখা যাচ্ছে না। আমি শক্ত থাকলে ও আবির মুর্ছা যায়। আবিরকে আমি ধরে বেড রুমে নিয়ে আসি ততক্ষনে ওর দাতে দাত লেগে গেছে এবং আমি হুজুর ডাকি আর চিৎকার করতে থাকি আমার চিতকারে পাশের বাসার সবাই বাড়িতে চলে আসে। আমি আর আমার প্রতিবেশিরা আবির কে ধরে হাস পাতাল এ চলে আসি । ডাক্তার দেখেছে এবং সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছেন । এর মানে সারা রাত আমাকে হাসপাতালে কাটাতে হবে । সকাল বেলায় একটা চায়ের কাপে দেখি লাল রক্ত! আমি আতকে উঠি। কি ব্যাপার! হঠাত সিস্টারের চিতকারে আমার সম্বিৎ ফিরে আসে , আমার তখন দোয়া দরুদ পড়া শুরু হয়ে গেছে। জীবনে এরকম অবস্থায় কোন দিন পড়ব ভাবিনি । শয়তান যেন আমার পিছে লেগেছে। আবিরের হুশ ফিরেছে কিন্তু সে বোবার মত হয়ে আছে এখনো কারন তার তখন পর্যন্ত হুশ হয় নাই যে আসলেই সে কিছু জিন দেখেছে এই কথা ডাক্তার কে ও বলা যাবে না। কারন এইসব বিশবাস করবে না চিকিতসক । হঠাত দেখি আজম! আমি ত ভুত দেখার মত ভয় পেয়েছি এবংগ চিৎকার শুরু করে দেই হাস পাতালেই । আমাকে ধরে নিয়ে একটা চেয়ারে বেধে রাখে আর আবিরের মত আমাকেও আটক করেছে, এর ভিতরে পুলিশ এসেছে ! কেন ?? কিচ্ছু বুঝার উপায় নাই । আমি আতংকে আবিরের দিকে তাকাতেই দেখি আবিরের মুখ দিয়ে ফেনা ঝরে আর আমাকে বলছে পালাও পালাও এখান থেকে! বলেই আবারো মুর্ছা যায় সে। আবিরের ছোট মামা আর মামি ততক্ষনে হাস পাতালে চলে আসছে আর সাথে এক হুজুর ধরে এনেছেন মামি। ভুতে ধরেছে এই ভেবে ঝাড়ফুক করা হল কিন্ত কোন লাভ হল না , পাগলের মত আবির আচরন করছে আর চিৎকার করে বলছে আমার প্রতিশোধ কে নিবে ? আমি প্রতিশোধ চাই, রক্ত চাই, লাশ চাই এইভাবে চিতকারে সকলেই ভয় পেয়ে যায় এবং আবিরকে টেনে ধরতে সাহস করছিল না কেউই হুজুর তাকে গলায় চেপে ধরে আর আবির তখন কামড় দেয় হুজুরের হাতে সে এক বিচ্ছিরি অবস্থা। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে যায় হুজুরের । যেন জিনের সাথে যুদ্ধ চলছে এইরকম কিছু ,পাশের থেকে এক সিস্টার বলে উঠল। ডাক্তার দৌড়ে এসে বলেন থামুন আপ্ নারা রোগিকে এরকম করছেন কেন? কে শুনে কার কথা , সে সবাইকে কামড়ে দিচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে আর কেউই তার পাশে যাচ্ছিল না, ডাক্তার ইঞ্জেকশান দিতে এসেছেন আবিরকে কিন্ত ডাক্তার ও জখম হয়ে গেছেন এই ধস্তা ধস্তিতে , হুজুর কিন্তু আবিরকে ছাড়েন নাই তিনি চেপে ধরে দোয়া পড়ে ফু দেন তিন বার আর হাত পা বেধে ফেলেন, আবিরের এরকম দৃশ্য দেখে আমার কান্না আসছে, সুস্থ আবির এরকম কেন হল? হুজুর বলেন এখন একে আমি বন্দি করছি এর শরীরে জিন এসেছে এবং অতৃপ্ত আত্না আছে । এদে র আমি কোরানের আয়াত পড়ে পড়ে বন্দি করছি কেউই সামনে আসবেন না । এলে যদি কোন ক্ষতি হয় আমার কোন দোষ থাকবে না এরা ভয়ানক এই বলে তিনি দোয়া পড়া শুরু করেন। কয়েক মিনিটেরর ভেতর আবির বেহুশ হয়ে যায় ওর শরীর এক্রম শান্ত হয়ে যায় আর বেডে এলিয়ে যায় তার দেহ ,নিথর আবিরকে দেখে কারো বুঝার উপায় নাই একটু আগে সে কি করেছে, হুজুরেরর হাত কামড়ে দিয়েছে আর ডাক্তারের ঘাড়ে কামড়ে ডাক্তারকে আই সিউ তে পাঠিয়েছে। ভুতের ভয়ে সবাই যখন অস্থির তখন আরেক জন হুজুর ডাল পালা নিয়ে হাজির হাস পাতালে, বিরক্তি লাগছিল আমার কিন্ত উপায় নাই আবিরকেভাল করতেই হবে। যাই হোক ঝাড় ফুক চলেই যাচ্ছে কিন্ত তার দাতে দাত লেগে অবস্থা সিরিয়াস। অনেক ক্ষন পর জানা গেল তাকে আশি ক পরীরতে ধরেছে এবং এটা অই বাসার থেকে পেয়েছে। এই কথা শুনে আমি মোটেই বিশবাস করিনাই কিন্ত পরিস্থিতি দেখে আমার এইই আসছে যে যাই হোক আমার এই মুহুর্তে যা দরকার তাহল আবিরের সুস্থতা আর হুজুরকে জানালাম কি ভাবে আমরা এর থেকে মুক্তি পাইতে পারি ? হুজুর জানান সুরা বাকারা শুনেন ৪০ দিন দেখেন কোন উন্নতি হয় কিনা আর তাকে পারলে রুকিয়া করতে দেন ,শুনেছি জিনে ধরলে মানু ষে র পাগলামি বেড়ে যায় আর উলটা পালটা কাজ করে কিন্ত আবির উলটা চুপ করে আছে কেন? সুরা শুন ছে আর মাঝে মাঝে চিৎকার দিয়ে চুপ হয়ে যাচ্ছে. হঠাত দেখি কুয়াশা নাই কেটে গেছে ভোরবেলা! আমার দেখা সকাল টা আজকে অনেক ভাল লাগছে কারন আমার আমার সারা রাত যা গেছে তার পরে আমাকে বলা যায় রীতি মত সিরিয়াস সমস্যায় পড়তে হত আসলেই বেচে গেছি, আসলাম আমার গাড়ীর ড্রাইভার বলেউঠল আফা আপ্নে কি যাবেন এখন বাসার দিকে? আমি ভয় পাই কারন আমার ত আসলেই অবস্থা ভাল নাই গত কয়দিনের ঘটনায়, আমি দোউরে যাই দেখতে আবির কে যে আসলে ও কি উঠেছে। তাকে শেকল দিয়ে বেধে রাখা ছিল আগেই আমি রীতি মত এই অবস্থা দেখে ভয় পাই যে কি করতে এই কাহিনি করেছে ডাক্তার? ডাক্তার আসেনার দেখে যায় তাকে, আমার আর সয় না আমি তাকে বাধন খুলে দিতে বল লে আমাকে ডাক্তার বারন ক্রএ দেয় কারন গত রাতে যা ও করেছে তা সত্যি ভয়াবহ ,আমার আর সাহসে কুলায় না যে আমি আবার যাই অই বাসায়, আমি আসলেই আতংকিত আছি গত কিছুদিন যাবত আর আমার এই দশা দেখে আমার বাসার কেউই আসছে না এইদিক। এই অবস্থায় আমি ড্রাইভার কে বলে দেই বাসা দেখ আর যদি পার আজকেই বাসা পরিবর্তন করে দাও ।আমি ততক্ষনে আবিরের পাশে বস তে যাব অমন সময়ে আবিরের আর্ত নাদ আমাকে বের কর আমাকে বাচাও আমি বাচতে চাই ।আমি তাকে ধরতে গেলে ডাক্তার আসেন আবার আর তাকে ওষুধ দিয়ে যায় আর আমার পাশে বসে বলেন দেখেন আপনার সবামির অবস্থা যা দেখছি আমরা তার শারিরিক কোন সমস্যা নাই কিন্ত সমস্যা হল তাকে আমরা রাখতেও পারব না এই ভাবে কারন আরো অসুস্থ রোগি আছেন আমাদের সুতরাং আপনি উনাকে বাড়িতে নিয়ে যান । আমি তখন আমার ভাইকে ফোন দিয়ে জানাই যে আমার তাকে নিয়ে অন্যত্র যাবার কোন অবস্থা নাই এবং তার বাড়িতে এক রাত থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া যাবে কিনা? সে আমাকে না করবে ভেবেছে কিন্ত শেষে আমাদের এক ফ্ল্যাটে নিয়ে যায় যেখানে আবিরের আর আমার থাকার ব্যবস্থা হয় কিন্ত তখন ও আমরা জান তাম না আমাদের জন্য অন্য কিছু অপেক্ষা করছে। বাসার ড্রাইভার আসলাম , গাড়িটা বাসার সাম নে রেখেই ভয়ে ভয়ে বাড়িতে ঢুকে আর দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে তার অবস্থা বেশ খারাপ , সেই সময় আমাদের কাজের মেয়ে তাকে দেখেই এক চিৎকার দেয় , কাকলি ওর নাম , আসলাম ও ভয় পায় তাকে দেখে কারন কাকলি কাল রঙ্ এর মাস্ক দিয়ে সকাল সকাল ঘুরে বেড়াচ্ছে বাসায়। কাল রঙ এর মাস্ক দেখে আসলাম এর প্রান যায় যায় অবস্থা এমন অবস্থায় সে বলে উঠে অই কালি তুই দেখস নাই আমারে ? অই তুই যে আই সস আমারে কবি না ? দুইজএন্র তুমুল ঝগড়া মানে কতক্ষন এই যুদ্ধ চলে এরপরে কাকলি বলে আজকেই এই বাসা ছারান দিলাম আমি ।কাজ করতাম না। আরে? কয় কি? আসলাম এর উত্তর স্যার এর বিপদ এই সময় তুই গেলে গা আমার কি অইব? তুই ও ছাড়, আস লাম কয় না আমি যামু না থাকুম , ভুতের ডরে আমি যামু না ,আল্লাহ ভরসা, শো ন স্যারের জন্য কিছু পাক কর দেহি আমার এ ম্যাডামে পাডাইসে যে আমি কিছু বাজার কইরে নিয়াযাই ।আর শুন যাইস না আমি আসার আগে। আমি বাজার করে নিয়া আসি এর পর দুইজন এ মিলে খাবোনে। এই কথা শুনে কাকলি বলে আমার এ ডর দেহাইয়া এখন ভাল ভাল কতাহ কও । জানস আমি শুনসি এই বাড়িতে নাকি মানুষ মরসে!!!! আস লাম ভয় পায় বলে কি কস? হ, হাচা কই কাকলির জবাব। কে কইসে এই কথা তোরে ? কাকলি বলে পাশের বিল্ডিং এর খালা, এই বাসায় নাকি এক মাইয়া ছিল সে আত্ন হত্যা করসে এবং এর পরে তার নাকি আত্না ঘুরে এই খান দিয়া এর জন্য জিন ভুত যাওয়া আসা করে এইদিক দিয়া। এই কথা শুনে আস লাম বলে হুজুর কে খবর দে জলদি। তারা দুইজনে হুজুর ডাকেন আর বাসা তালা দিয়ে চলে যায় । খাবার রান্নার কথা ভুলে দুই জনে মিলে বাড়িওয়ালির বাসায় গিয়ে দেখে অই বাড়িতে কেউইনাই তালা দেয়া। তাদের ভয় আরো বেড়ে যায় আর দোউরে তারা বাজারের দিকে চএল যায় কাওরান বাজান এলাকা যেন শুন শান কারন তখন মানুষ জন কাজে আসেনি। ভয়ে গাড়ি ও ফেলে এসেছে আসলাম , হঠাত আস লাম বেহুশ হয়ে গেলে কাকলি চিৎকার দেয় আস লাম আস লাম বলে , মোড়ের দিকে এক গাড়িতে এক লোক দাঁড়িয়ে সব দেখছিল সে ধঈর পায়ে আসে আর কাকলিকে বলে কোন বাসা? কাক্লির তাকে দেখে পছন্দ হয় নাই এর মাঝেই অনেক লোক জমে যায় ,সাদা জোব্বা পড়া মানুষ টা আর দেখা যায় না হাওয়ায় যেন মিলিয়ে গেছে।

Comments

Popular posts from this blog

কবিতার ভালোবাসা ......

বঙ্গাসন—গুরুজী