ভট ভটি ওয়ালা!!

চট্টগ্রামের এর  লাইফ স্কিল প্রোগ্রাম।  সবাই অংশ নিচ্ছিল  বলা যায় নিরবে হয়ে যাচ্ছে এমন ...সময় ২০১৫ এর জুন কি জুলাই মাস,সবাই ই খুবি ব্যস্ত   কারন অনেক দৌড় ঝাপ হয়ে গেল এই প্রোগ্রামের জন্য। হঠাতী এক মেয়ে লাল শাড়ী পড়া   অবস্থায় দৌড় দিল কেন তা দেখতে চোখ রেখে ছিল যারা তারা হাসছিল মেয়েটার পাগলামো দেখে, তার এক হাতে সেলফি তোলার জন্য রাখা স্মার্ট ফোন টার দিকে তাকিয়ে আছে একজন চেহারায় তীক্ষ দৃষিট যেন পারলে মার দেয় কেন সেলফি তুলছে!!!!!! মেয়েটা তোয়াক্কা না করেই ছবি তোলায় ব্যস্ত। একটু পর পর ক্লিক ক্লিক এর মাঝেই একজন আপা গোছের কেউ বলল এত ছবি কিউ?? নিজেকে দেখার জন্য... চপল উত্তর কন্যার। কন্যার নাম ও বেশ ,জুলি। বিদেশি বিদেশি ভাব কিন্তু সে এদেশি মানে বাঙ্গালি,কনের বাড়ী চট্টগ্রামে আর যিনি তার & আর চোখ রাঙ্গাচ্ছিল তিনি আর কেউ নয় গল্পের ভট ভটি ওয়ালা......আমাদের গল্পের নায়ক
জুলি ...
চটপটে হাসিখুশি একটা মেয়ে,সারা ঘর মাতিয়ে রাখতে এক্সপার্ট।বলা যায় ভীষন আনন্দে থাকতে ভাল্ বাসে,কাজ করছে লাইফ স্কিল এর একটা প্রোগ্রামে ............
প্রোগ্রামের মাঝে হটাত ই একটা আচমকা দমকা হাওয়ার মত ঘটনা ঘটে গেল,জুলি তাকিয়ে আছে আর এক দিকে  হটাত খেয়াল করল ঐ লোক তাকে দেখছে ??কেন?? আগেও তাকে দেখেছে কিন্তু এইবারে সে চোরা চাহ নি দিয়ে দেখে কেন?? জুলির সাথে এই ভটভটি ওয়ালার রিলেশান ঐ হাই হ্যালোতেই... সে এই ব্যাক্তিকে ৪ চোক্ষে দেখতে পারে না কারন জুলির ধারনা পৃথিবির যত বিরল প্রজাতি আছে তার মাঝে এই লোক হল মানব প্রজাতির মাঝে একটা বিরল প্রজাতি এইটা এমন একটা আল্লাহর সৃষ্টি যে কোন মেয়েকে পছন্দ করা তো দুরের কথা দেখতেই পারে না!!! তার কাছে কোন কিছুই আনন্দের না  সে জানেই না ভাল বাসার মানে কি?? ভীষন অহংকারি এই লোক যখন তার মোটর বাইক (ভটভটি) নিয়ে ঘোরে তা এক দেখার মতন দৃশ্য হয়।  ও হ্যা এই ভটভটি ওয়ালার একটা নাম ও আছে!! ।।হাসান...।
ফেনির আঞ্চলিক ভাষার টান টা কথা বলতে বলতে বেরিয়ে যায় তার। শুদ্ধ বাংলায় কথা বলা যেন অনেক কষ্টের তার জন্য।মাঝে মাঝে ত এমন আজব আচরন সে করে যা না দেখলে কেউ বিলিভ ই করবে না আসলেই সে কি জিনিস।।কিন্তু এতে তার বিন্দু মাত্র আপত্তি নাই তিনি মহা উতসাহে তার বয়ান দিয়ে যাবেন...আজব ।।
জুলির ভাবনায় হাসান নামক এই বিরল প্রজাতি যখন ঘুরছে সেই মুহুর্তে সেই প্রানি মানে ভটভটিওয়ালা হাসান তার ই দিকে তাকিয়ে!!আত্মা শুকিয়ে গেল প্রায় জুলির...কারন এই জিনিস তার দিকে তাকানোর মত কোন কিছুই নাই!! কিন্তু জুলিকে অবাক করে দিয়ে সে তাকিয়ে আছে......একবার না ৩বার তাকাল।আবার জিজ্ঞেস ও করল কেমন আছে??জুলি ভাবছে আর একটু হলে সে ধপাস করেই পড়ে হার্ট ফেল করত!! যাহোক জুলি সুক্ষ ভাবে বুঝার চেষ্টা করল কি এমন কারনে সে তাকাল। এই নিয়ে যখন তার মাথায় সেই মুহুর্তে সাহানা আপা মানে সেই অনুষ্ঠানের এক পারটিসিপেন্ট এসে জুলিকে ধাক্কা দিয়া হুশে আনল। কিরে জুলি কি হয়েছে?? এ।।আমতা আমতা  করে জবাব দিল সে,ঘটনার আক স্মিক্তায় জুলি থ। সাহানা আপু আমি তোমাদের ছবি তুলে দিব ওকে??
হ্যা তা না হয় দিস কিন্তু তুই এমন ভ্যাবচ্যাকা খেয়ে বসে আছিস কেন?? কি হয়সে?? সাহানার প্রশ্ন। কিছু না ।। জুলি মুখের উপর জবার দিল কিন্তু ভেতরে ভেত রে সে মচকা খাওয়া মানবিতে পরিনত হইয়ে গেছে বলা যায় পাল্পিটিশান শুরু। যাক ভেত রে ভেত রে যা আছে তা থাক কিন্তু উপ্রে সে ব্যাক্তিতব সম্পন্ন নারী হইয়া রইল।  প্রোগ্রামের মাঝেই সে একই বার দেখল তাকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ভট ভটি ওয়ালা...জুলির প্রান যায় যায় ই কারন এই জিনিস কিভাবে মেয়ে দেখে তাও এইরকম ভাবে!!!সে আশে পাশে ভাল করে দেখতে থাকে আর কোন সুন্দরি মেয়ে আছে কিনা অবশ্য থাকলেও বালাই ষাট কারন জুলির জানা মতে এই ভট ভটিওয়ালা এই জ়ীবনে কইন্যা দেখবে না কিন্তু আজকের ঘটনা ব্যাতিক্ক্রম!! 
এক্টূ পর দেখে জুলি ভট ভটি ওয়ালা  পানি দিচ্ছে কাউকে!জুলি আরও অবাক হয়!! কারন তার মত মানুষ জীবনে কাউকে পানি খাওয়াবে এইটা ভাবা ই যায় না!!!


প্রোগ্রাম শেষ, সবাই বিদায় নিচ্ছে একে অন্যের কাছ থেকে ছবি ও তুলছে, জুলি ও বেরিয়ে যাবার প্রস্তুতি নিল  বেরো তে বেরোতে উকি ঁ দিল যে ভটভটি ওয়ালা কি আশে পাশে আছে না গেছে??
দেখে নাহ নেই ।। ভেত রে ভেত রে অদ্ভুত মিশ্র প্রতিক্রিয়া নিয়ে বাসায় আসল জুলি।



বাসায় ফিরেই হাসছে জুলি। তার হাসি দেখে ছোট বোন শিউলির মিশ্র প্রতিক্রিয়া হল ভাবল পাগল হয়ে গেছে মনে হয়।শিউলি জুলির বোন,আপি তোর কি হইসে?পাগলের মত হাসছিস কেন?? জুলির হাসি তখন ও বন্ধ হয় নাই  অনেক কষ্টে হাসি চেপেই বলল আমি পাগল ই ...... ওকে ...


এর কিছুদিন পর...
 হাসান কে একটা স্কুটীতে দেখে জুলি হাঁ হয়ে গেল। মানুষ এইরকম হতে পারে ?? সব ছেলেরা মোটর বাইক নিয়ে ঘুরে  আর এই জিনিস কোত্থেকে মেয়েদের স্কুটার নিয়ে হাজির!!!! এইটা যে একটা বিরল প্রজাতি তা আবারো প্রমানিত হল। হঠাত জুলির মাথায় আস ল এক টু জিজ্ঞেস করি কি ঘটনা কিন্তু সাহসে আর কুলোল না কারন যে প্রজাতি ১৯-২০ হলেই সে ত্যাড়ামো শুরু করবে সুতরাং উলটা পথ  ধরল জুলি। আপা...  জুলি তাকায় ।। দেখে  বিখ্যাত ব্যাক্তি হাসান ভটভটিওইয়ালা ডাকছে জুলি র মাথা ইয় ততক্ষনে  হাসানের নাম এর সাথে মেয়েলি স্কুটী দেখে ভটভটি ওয়ালা নাম টা চলে আসছে।
জ়ী ভাইয়া।।জুলি উত্তর দেয় ,আগামিকাল কিন্তু আস তে হবে । কেন?? সচকিত প্রশ্ন জুলির। শাখার কিছু কাজ আছে আপনি আসলে ভাল হয়। জুলি ভেতরে ভয় পাচ্ছিল যদি আরও কিছু বলে।যাক বলে নাই।
আমি চেষ্টা করব।আসি তাহলে ??একটা হাসি হাসি চেহারা বানিয়ে বের হল জুলি বের হতে হতেখেয়াল করে দেখে তার দিয়ে আড় নয়নে ভটভটি ওয়ালা তাকিয়ে আছে। জুলিও বুঝার চেষ্টা করল এর কি হরমোনাল সমস্যা হয়ে গেল নাকি??এ ত কোন মহিলাকে দেখে ভাল নজরে দেখেই না আর জুলি যতটা জানে এই ত্যাদোর নাকি বিয়ে না করার পন করেছে তাই নিশ্চিন্তে তার সামনে গেলে ও কোন সমস্যা নাই কিন্তু এখন তো এর হাব ভাব এ মনে হচ্ছে সে আমার প্রেমে পড়েছে!!!  যাক এর ভেতরে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কাল প্রোগ্রাম সুত্রাং এখন এর সাথে ভেজাল করা মানে নিজের বিপদ ডাকা। সুতরাং যেমন আছে চলুক।কিন্তু জুলির ব্যাপার টা মজাই লাগল, বাড়ি ফিরে নিজকে আয়নার সামনে দেখতে লাগল জুলি।আর হাসছিল। স্পেশালি স্কুটীর উপ্রে হাসান কে দেখে ফিক করে আসা হাসি কোন মতে চেপে রেখে রিকশায় উঠেই হাস্ তে হাস তে বাসায় এসে ও হাসি আর থামে না... বেশ এন জয় করল ব্যাপার টা...  সেই থেকে হাসানের নাম দিল সে ভটভটি ওয়ালা!!

এর মাঝে জুলির চুল ছোট করে কেটে ফেলতে হল স্কিন সমস্যার কারনে।একদিনের ঘটনা জুলি লাইফ স্কিলের প্রোগ্রাম এর অফিস 'এসো গড়ি নিজের জ়ীবন'এর  সিড়ির দরজার সামনে দাড়িয়ে চুল কাটার পর নিজেকে দেখছে হঠাত কোত্থেকে ভট ভটিওয়ালা  উপ্সথিত জুলি তাকে দেখেই দৌড় ভট ভটিওয়ালা হেসে ফেলল ।।জুলি ভাবল আর মান সম্মান কিছুই রইল না এখন থেকে এই চুল আর দেখানো পসিবল না।।জুলি ভাবছে কি ভাবছে ভটভটি ওয়ালা !!সে তো এই কথাকে কাহিনি বানিয়ে বলে দিবে যে আমার চুল ছোট। এতে আমি যে মাথায় ওড়না পেচিয়ে রাখি তাও ফাঁস হয়ে গেল। ইশ একদম ফিনিশদ আমার মান সম্মান কারন ভটভটিকে দেখলেই জুলি মুখ ফুলিয়ে রাখে যাতে বেশি বেশি লাফাতে না পারে। কিন্তু মনে মনে সে খুব খুশ... হাসানের বেকায়দা অবস্থা দেখে!!


ঝগড়া পর্বঃ
লাইফ স্কিল প্রোগ্রাম শেষ... একদিনের ঘটনা। জুলি অফিসে গেল প্রোগ্রামের কাজে, গিয়ে বলল হাসান ভাইইয়া(ভটভটিওয়ালা) আমাকে এই জিনিস গুলো দেন প্লিজ! সাধারনত ভটভটি ওয়ালা দোড় দিয়ে আসে কাজ করতে কিন্তু আজ সে ব্যাতিক্রম সে এক অফিস সহকারি কে ডেকে বলল  এই জিনিস গুলি দিয়ে আয়। এর মাঝেই জুলির সাথে ভাল ঠান্ডা লড়াই হয়ে গেছে হাসানের তার কারনে এই কীর্তি। হাসানের সমস্যা হল মেয়ে মানুষ এত বেশি প্রায়রিটি কেন পাবে??সেই কারনে জুলিকে অপদস্থ করে সে।কারোন জুলি তার আচরনে বুঝতে পারে হাসান খুবি অহংকারি আর মেয়েদের খুব আন্ডারিস্তিমেট করে।খুব কষ্ট পেলেও জুলি কিছুই বলল না কারন হাসান ঝগড়া করতে উদ্যত আর যেহেতু জুলি তাকে এত বেশি পাত্তা দেয় নাই তাই এই টা তার আতেঁ ঘা লেগেছে সুত রাং জুলির পিছে লাগ আর জুলিকে অপদস্থ করতে এক টু ও ছাড় দেয় নাই।জুলি ঘটনা বুঝে ও চুপ কারন সে হাসান কে ভা ল বাসে কিন্তু ......


১জুন ২০১৬...
ব্যাংকক সিঙ্গাপুর।
নিউরো হাস পাতালের কেবিনে এক টা মেয়ে ...চুল গুলি ছোট করে কাটা। জাপানি চেহারার মেয়ে বলে ম্যক্সিমাম জাপানি ই ভাবল মেয়েটাকে।মেয়েটা আর কেউ না ...জ়ুলি... আগের রাতে কেমো দেয়া হয়েছে ।। ডাক্তার এসে এসে তাকে দেখে যায়। জুলির মা বাবা ভাই বোন সহ সব আত্তীয় সজন আসতে থাকেন, মেয়েটার  মন হঠাত করেই ভটভটি ওয়ালার কথা মনে আসে। চোখের কোনে অশ্রু ...।অনেক সপ্ন চোখে  কিন্তু ডাক্তার আর নার্সের আনাগোনায় আর ওষুধের মাঝে সে বেহুশ ভুলে গিয়েছিল তার সব।।শুধু তার মাথায় সেই ভটভটিওয়ালার চেহারা মাথায় আসে।নার্স কে বলে  ফোন দেয় ভটভটি ওয়ালাকে
 ওপাশ থেকে হ্যালো বলে হাসান, কিন্তু জুলি নিরুত্তর কন্ঠ শুনেই লাইন কেটে দেয়।  কাঁদতে থাকে জুলি।তার সুন্দর মাথার চুল গুলি ঝরে যাচ্ছে আর চামড়া গুলি কুচঁকানো হতে দেখে সে অনেক অ স হায় বোধ করে। প্রিয় মানুষ টাকে বলা হবে না সে তাকে ভাল বাসে।এর মাঝেই সে বুঝে যায় হাসান সার্থপর আর হওয়াই সবাভাবিক জেনে বুঝে কে এক মৃত লাশ কে ভাল বাস বে ???? মেয়েটার মাঝে বোধ আসে যদি আমি সুস্থ হয়ে যাই ভাল হয়ে যাই তাহ লে আমি আমার  জীবন কে মানুষের উপকারে কাজে লাগাব।আর এমন কাউকে  ভাল বাসব যে আমাকে অনেক অনেক ভাল বাসে।


মার্চ ২০১৭
অনেক যুদ্ধের পর জুলি সুস্থ হয়ে চট্টগ্রাম ফেরে।কিন্তু এ অন্যরকম জুলি। আগের মত হাসি নাই আনন্দের চিনহ অ নাই যে জুলি সবাই কে মাতিয়ে রাখত সে এখন নিজের মত করে চলে।লাইফ স্কিলের সেই জায়গায় আর তেমন যায় ও না। কিছুদিন পর পর তার এক এক রকমের টেস্ট হয়, ঢাকা চট্ট গ্রাম সিঙ্গাপুর এই হল জুলির লাইফ, লাখ লাখ টাকা শেষ প্রায়। কিন্তু চিকিতসা এখন শেষ হয় নাই। এত কিছুর মাঝেও জুলির সামনে ভটভটি ওয়ালার চেহারা ভেসে উঠে কিন্তু ভট ভটি ওয়ালা তো চলে গেছে। জুলি ভাবছে টাকা যোগ্যতাই কি সব একজন মানুষের জীবনে?? অসুস্থ হবার পর সে শিখেছে দেখেছে অনেক কিছুই। কিন্তু আজো সে ভট ভটী ওয়ালার স্কুটীতে বসা ছবি সামনে দেখে আর ভাবে কোন একদিন সে ভটভটীওয়ালার পেছনের সিট টা দখল করবে আর বলবে তোমার মত আহাম্মক বিরল প্রজাতির  প্রানি আমি লাইফে দেখি নাই যে মেয়েদের স্কূটার চালায়!!  এক কাজ কর তুমি আমার পেছনে বস কারন একটা মেয়ের জন্য এই স্কুটি তোমার জন্য না। কিন্তু এই কথা গুলি শুধুই জুলির কল্পনা বাস্তব তার চে নিষ্ঠুর। বাস্তব বলছে জুলির জন্য পৃথিবী টা এমন যতক্ষন নিঃশাবস আছে ততক্ষন।




মার্চ ২০১৮
জুলি সম্পুর্ন সুস্থ। ডাক্তার রা ঘোষনা দেয়,অনেক চেষ্টা আর নিয়মিত চেকাপ এ জুলি ভাল হয়ে গেছে এই সময় টায় তার মা তার সব চে কাছে ছিল আর একজন আপি যিনি প্রায় খোঁজ নিত জুলির ।অনেক দিন পর জুলি আবার ও লাইফস্কিলের প্রোগ্রামে যায়। চুল গুলি আর বড় করা হয় নাই এত ঝক্কি যে গেছে তার উপ্রে। সবাই ই তাকে অনেক উইশ করে কাম ব্যাক করার জন্য।
হঠাত...

জানালা দিয়ে জুলির চোখ চলে যায় সাদা রঙইয়ের তার প্রিয় ভটভটির দিকে... জুলি বুঝতে পারে ভটভটিওয়ালা হাসান আছে অফিসে। জুলির মাঝে আগের মত আর ভাল বাসা নাই সে এখন অন্যরকম...
সরাসরি সে হাসানের ডেস্কে যায়... হাসান ভাইয়া... হাসান তাকে দেখে হাসি দেয় অনেকদিন বাদে দেখা হবার কারনে যাকে বলে সৌজন্যতা... জুলি ব্যাগ থেকে একটা ইনভেটেশান কার্ড দেয় হাসানের হাতে...হাসান হতভম্ভ!! ঘটনার আক স্মিকতা তাকে আপ্লুত করছে না কিন্তু একটু অবাক সে।
আপা এইটা কি??বুঝেও যেন না বুঝার ভান ...। বিয়ের দাওয়াত  ভাইয়া আপনি কিন্তু অবশ্যি আসবেন নাইলে আমি কষ্ট পাব।হাসান এর চেহারা দেখার মত তখন । জুলি সবাইকে বিয়ের দাওইয়াত দিয়ে দ্রুত অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। অফিসের সামনে ভটভটি টাকে  হাত দিয়ে ছুয়ে দেয় সে। চোখের কোনে পানি  কারন সে জানে ভটভটি ওয়ালা ইস মুভ অন......
কিন্তু
এমন যদি হত  সে ভাবছে  ভট ভট শব্দে স্কুটী তে চেপে পৃথিবীর বিরল এই প্রানী টা  তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলত আমি তোমাকে ভাল বাসি তুমি যেমন ই থাকো না কেন আমি তোমাকে ছেড়ে যাব না, এত আসলে ভাবনা।

ঢাকা টু নিউ ইয়র্ক গামি একটা প্লেনে জুলি ও তার সবামি। হাতটা একটু ধরবে আমার... সোহেলের .আবদার, চশমা পড়া জুলি তার হাত টা ধরে আর ভাবতে থাকে এই হাতটাই তো আমি ভটভটি ওয়ালার ধরতে চেয়েছিলাম।। জুলির ভাবনায় ছেদ হয়  সোহেলের কথায়... তুমি কোথায় হারিয়ে গেছ জুলি?? এদিকে সরে আস জানালাটা বন্ধ কর নয়ত ঠান্ডা লাগবে তোমার। জুলি তাকিয়ে থাকে সোহেলের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে। চুপ চাপ দেখে সোহেল জানতে চাই তোমার কি খারাপ লাগছে দেশ ছেড়ে যাবার কারনে?? জুলি এইবারে কাদঁতে থাকে।সোহেল মাথায় হাত বুলোয় তার বলে তোমার ভালোর জন্য ই দেশ ছেড়ে আসা নয়ত আস তাম না তোমার শরীর খারাপ হয়ে যায় অল্পতেই ভাল চিকিতসা পেলে তুমি আর সিক হবে না আর তোমার জন্য এনভায়রমেন্টাল চেঞ্জ টা দরকারি ছিল। প্রমিজ করছি ২ বছর পর আমরা আবার দেশে চলে আসব।
সোহেলের কথার কোন উত্তর না দিয়ে জুলি চোখ বন্ধ করে ঘুমাতে চেষ্টা করে । কিন্তু ঘুম আসছে না ওর। ২বছর বিদেশ বিভুয়ে থাকার চে বড় কথা হল হাসান ভটভটিওয়ালাকে সে আর কোন দিন দেখবে না আর টাইম টু টাইম তার পিছে লেগে থাকা ত দুরের কথা তার মেয়েলি স্কুটার টাও দেখা হবে না সাথে ইচ্ছে হয় এক লাফ দিয়ে প্লেন থেকে নেমে যায় আর চট্টগ্রামে পৌছে গিয়ে ভটভটি ওয়ালা কে বলে তুমি এত সার্থপর কেন?? কিন্তু এসব কিছুই হয় না।
হঠাত জুলি বলে উঠে সোহেল আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই। সোহেল তাকায় জুলির দিকে ... আরষ্ট ভাবে জুলি বলতে থাকে আমি একজন কে ভাল বাসি  আমি জানি তুমি আমাকে বিয়ে করেছ কোন লোভএ  নয় আমার সবচেয়ে খারাপ সময়ে তুমি আমাকে সব জেনে শুনেই বিয়ে করেছ কিন্তু আমি তোমাকে সেইরকম ভাবে কখন ভাল বাস্ তে পারব কিনা জানিনা কারন আমি সত্যি ই কনফেস করছি আমি তোমার চে বেশি তাকে ভাল বাসি। সোহেল চুপ করে শুনতে থাকে।
সে আমার ভাল বাসা নয় শুধু তার চে বেশি কিছু, আমি তাকে না জেনে শুনেই ভা ল বেসে ফেলেছিলাম। আমার দিন রাতের শয়নে সবপনে সে ছিল আমার নায়কের মতন ।সিনেমায় যেমন নায়িকা কল্পনা করে তার নায়ক কে তেমন বলতে পার সুপার হিরো,আর আমি তার হিরোইন।কিন্তু জান এই যে তুমি আমার সব জেনে শুনে আমাকে বিয়ে করেছ সব কিছু জেনে তুমি আমাকে আগলে রাখছ সে এইটা করে নাই ... তার কাছে ইম্পরটেন্ট ছিল আমি সুস্থ কিনা দেখা যখন জানতে পারল আমি সিক তখন এক বারের জন্য ও আমার খোজঁ করে নাই কিন্তু যেইদিন আমি স্কিল্ড প্রফেশনাল এর বেস্ট সার্টি ফিকেট টা পেলাম সে আমার কাছে দৌড়ে আসে & বলে খাওয়াতে হবে। এর আগ পর্যন্ত আমার কোন ফিলিংস্ কে মুল্য দেয় নাই। জানো সোহেল সেইদিন আমি সার্টিফিকেট টা হাতে নিয়ে অনেক কেদেঁছিলাম কারন আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমার মুল্য জাস্ট এই সার্টিফিকেটের জন্য মানুষ হিসেবে নয়। আমি এর পর যখন দেখলাম সে মানুষ টা আমাকে দেখায়ে মিন করছিল আমি তার যোগ্য না আমি চুপ চাপ চলে আসি কারন আমি আল্লাহর কাছে এমন কাউকে চেয়েছিলাম যে আমাকে কাগজের বউ বানিয়ে সম্মান দিবে না।আজ আমি আবারো কাদঁছি কেন জানো??তোমার কারনে। যার কাছে আমি আশা করেছিলাম সে আমাকে অপদস্থ করতে একটু খারাপ ফিল করে নাই কিন্তু আমি তোমার কাছ থেকে তার চে বেশি পেয়েছি...আর নিজেকে বড় অপরাধি ভাবছি কারন আমি তোমাকে ধোঁকা দিতে পারব না... আমি তোমাকে ভাল বাসি না সোহেল।
সোহেল অবাক হয় নাই। কারন জুলির কাছ থেকে এটা তার পাবার কথা দীর্ঘদিন অসুস্থ থেকে সে অনেক্ টাই  বদলে গেছে। শান্ত ভঙ্গিতে সে বলে তাহলে এখন কি করতে চাও?? ফিরে যেতে চাই জুলির জবাব।
এইবার সোহেল নড়ে চড়ে বসে,মানে????? মানে আমি নিউ ইয়র্ক যাচ্ছি না ।তুমি কি পাগল হয়েছ জুলি???
আমি আমার মনের কথাই জানালাম তোমায়। জুলির উত্তর।
আমাকে তাহলে বিয়ে করেছ কেন?? সোহেলের প্রশ্ন।
আমি জানিনা কিছুই ।।জুলি বলে আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি আমি আসলেই বুঝতে পারছি আমি ভুল করেছি আমি আমার পছন্দ কে গুরুতব দেই নাই অন্তত একবার আমার বলা উচিত ছিল আমি কি করব বল সোহেল??
এইভাবে তুমি আমার লাইফটা বরবাদ করতে পারো না জুলি...চিতকার করে সোহেল বলতে থাকে, তোমার জানা উচিত আমি তোমাকে বিয়ে করেছি তোমার কিছু ভাল গুন আছে দেখেই ...এখন আমি কেন এখন বঞ্চিত হব?? প্লেনের ভেতরে এই চিল্লাচিল্লি তে সবারি নজরে পড়ে যায় তারা। আর এই অবস্থা যখন তখন কে যেন পেছন থেকে বলে উঠে আপনারা কি শুরু করলেন ??ফ্যামিলি ম্যাটার বাড়ীতে সল্ভ করে আসতেন এখন এইখানে তামাশা করছেন কেন??

প্লেন দুবাই থামে।এর মাঝে ২জন ২দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে থাকে বিষন্ন দৃষ্টি তে। জুলির মনে খালি ভটভটি ওয়ালা আর সোহেল সে জুলির মুখের দিকে অস হায় হয়ে তাকায় যেন প্রার্থনা করছে জুলি তার সিদ্ধান্ত যেন বদলায়।
জুলি বলে আমাকে এখান থেকে বাংলাদেশ গামি টিকেট করে দাও। সোহেল জুলির হাত টা শক্ত করে  ধরে বলে জুলি তুমি পাগলামো করো না প্লিজ আমাকে অন্তত একবার তোমার পাশে থেকে সুযোগ করে দাও তোমাকে ভাল বাসার তোমার জন্য কিছু করার,আমি তোমার ভাল বাসার যোগ্য হতে চাই।

আমি কি করব আমার মন ত পড়ে আছে তার কাছে আমি তাকে ভুলতে পারছি না।জুলির সহজ উত্তর।
আমি ভুলিয়ে দিব, সোহেল বলে, আমি তোমার মনের মত হব।জুলি বলে সেও কি সম্ভব??? তার জায়গা ত আমি আর কাউকে দিতে পারব না সোহেল তাহলে এই বিয়ে টিকিয়ে রেখে লাভ কি?? জুলি বলে। যে তোমায় ভা ল বাসে না যে তোমার চেহারা দেখতে রাজি না তার কারনে তুমি তোমার সংসার ছেড়ে দিবে???? !!! আমাকে ছেড়ে যেতে তোমার একটু খারাপ লাগবে না?? সোহেল বলতে থাকে ... তুমি এত বোকা কেন জুলি??তুমি কেন এত সরল ??সে যদি তোমাকে ভাল বাসে তাহলে আমি নিজে তোমাকে তার কাছে রেখে আসব আমাকে বল যে সে তোমাকে ভাল বাসে। জুলি নিশ্চুপ।অঝোর ধারায় কাদঁতে থাকে সে, সোহেল তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলে সে বলে আমাকে একা ছেড়ে দাও। সোহেল বলে ছেড়ে দেয়ার জন্যত আমি তোমাকে আমার সাথে করে আনিনি।এই কথা শুনে চোখ তুলে তাকায় সে...
 ১টু মুচকি
হাসি দেয় জুলি।তুমি আমাকে এইরকম করলে ত আমি আর বাংলাদেশেই যাব না। হাহাহা এই না বললা চলে যেতে চাও।সোহেলের অনুযোগ। যেতাম কিন্তু যেই ভাবে তুমি আমার পিছে কাঠাঁলের আঠার মত লেগে আছ যাওয়ার কোন চান্স আছে?? জুলির  মুখের উপ্রে জবাব। অল্প কিছুক্ষনের ভেতরে ২জন ই হাস তে থাকে।উফ আমি যা ভয় পেয়েছিলাম তোমার কথায় ভেবেছিলা সত্যি ই তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে।
শুনো এত খুশি হবার কিছুই নাই যদি দেখি তুমি ও সেইরকম তাহলে আমি টিকেট কেটে চলে যাব।
হা হা হা  সোহেল হাস তে থাকে আর বলে যেও তাও ২বছর পর আমাদের ফ্যামিলি বানিয়ে...কট মট চোখে তাকায় জুলি।দুবাই এয়ারপোর্টের লাউঞ্জ থেকে বের হয়ে ২জন এ নিউই ইয় র্ক গামি  প্লেনে চড়ে  নতুন আলোয় তাদের সপ্নের ঘর বাধঁতে...
পেছনে পড়ে থাকে সেই ভট ভটি ওয়ালার প্রতি অকৃত্তিম ভাল বাসা

Comments

Popular posts from this blog

কুয়াশা

কবিতার ভালোবাসা ......

বঙ্গাসন—গুরুজী